বিলাতি ধনিয়ার উৎপত্তি দক্ষিণ আমেরিকা হয়ে ধীরে ধীরে পাক-ভারত উপমহাদেশসহ গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বনঢুলার বিস্তার হচ্ছে। ভিয়েতনাম ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে সালাদজাতীয় অর্থকরী ফসল হিসেবে রফতানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। বনঢুলার বিভিন্ন প্রজাতি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলেও ব্যাপকভাবে চাষ হয় আর্জেন্টিনা, তুরস্ক ও জর্ডানেও। এমনকি শীতপ্রধান দেশ জার্মানিতেও অন্য আরেক ধরনের প্রজাতির বনঢুলা বা বিলাতি ধনিয়ার চাষ হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মিয়ানমারের কিছু অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বনঢুলার চাষাবাদ সম্প্রসারণ হচ্ছে।দেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্যাঞ্চলের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল বিলাতি ধনিয়া বা বনঢুলা হলেও দেশের প্রায় সব জায়গায়ই এর চাষ করা যায়। সারা দেশের প্রায় প্রতিটি বাড়ির আনাচে-কানাচে, অযত্নে-অবহেলায় বড় হতে দেখা যায় বনঢুলাকে। বনঢুলাকে আবার কেউ কেউ বাংলার ধনিয়া বলে অভিহিত করেন।
গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের বাইরে ইংরেজিতে ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ এশিয়ায় একে Eryngium বলা হয়, আবার কোনো কোনো জায়গায় False coriander বলা হয়ে থাকে। কেননা, বিলাতি ধনিয়া বা বনঢুলার একক ইংরেজি নাম নেই।সবজির সুগন্ধি ও স্বাদ বাড়াতে এবং খেতে আকর্ষণীয় করতে বিলাতি ধনিয়ার ভূমিকা অসামান্য। বিলাতি ধনিয়া দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্যাঞ্চলের নিজস্ব ধনিয়া।
গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের বাইরে ইংরেজিতে ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ এশিয়ায় একে Eryngium বলা হয়, আবার কোনো কোনো জায়গায় False coriander বলা হয়ে থাকে। কেননা, বিলাতি ধনিয়া বা বনঢুলার একক ইংরেজি নাম নেই।সবজির সুগন্ধি ও স্বাদ বাড়াতে এবং খেতে আকর্ষণীয় করতে বিলাতি ধনিয়ার ভূমিকা অসামান্য। বিলাতি ধনিয়া দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্যাঞ্চলের নিজস্ব ধনিয়া।
বনঢুলা/বিলাতি ধনিয়ার বৈশিষ্ট্য
বিলাতি ধনিয়া বা বনঢুলা বা বাংলার ধনিয়া যে নামেই বাংলায় ডাকা হোক না কেন, এর বৈজ্ঞানিক নাম Eryngium foretidium. আর এর পরিবার Umbeliferae. বিলাতি ধনিয়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এ ধনিয়ার গন্ধ কড়া। পাতা চ্যাপ্টা হওয়ায় ফলন বেশি। পাতার দু’পাশে খাজকাটা। সবুজ ও ভারি এ পাতা লম্বায় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার এবং চ্যাপ্টায় দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার। বীজ অমসৃণ, দ্বিবীজপত্রী, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র। একবার বীজ বুনলে কয়েক বছর গাছ বেঁচে থাকে, ফলে বার বার পাতা সংগ্রহ করা যায়।
চাষের মাটি
পাহাড়ি অঞ্চলে বেশি ফলন হলেও যে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি ও মাটি অমস্নীয় সেসব মাটিতে বনঢুলা বা বিলাতি ধনিয়া বা বাংলা ধনিয়া ভালো হয়। এ ধনিয়া চাষের জন্য এক মিটার চওড়া ও তিন মিটার লম্বা বেড তৈরি করে নিতে হয়। চাষে মই দিতে হয় পাঁচ থেকে ছয়টি। বৃষ্টির পানি বেড থেকে তাড়াতাড়ি নেমে যাওয়ার জন্য প্রত্যেক বেডের মাঝখানে ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া নালা রাখতে হয়। ফলন ভালো পেতে মাটিতে রস থাকতে হয় প্রচুর।
বনঢুলার জন্য সার
বণঢুলা চাষের জন্য প্রতি শতাংশ জমিতে ৮০ কেজি কম্পোস্ট বা গোবর সার, ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, এক কেজি টিএসপি ও এক কেজি এমপি সার শেষ চাষ মইয়ের বেলায় দিয়ে বেড সমান করে তৈরি করে নিতে হয়। ধনিয়া পাতা সংগ্রহের জন্য বীজ থেকে চারা গজানোর এক মাস পরপর প্রতি শতাংশ জমিতে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিতে হয়। সঙ্গে হালকা সেচ দিলে সারের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। ইউরিয়া সার প্রয়োগের ফলে পাতা রসালো, সবুজ ও তাড়াতাড়ি বাড়ে।
বণঢুলা চাষের জন্য প্রতি শতাংশ জমিতে ৮০ কেজি কম্পোস্ট বা গোবর সার, ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, এক কেজি টিএসপি ও এক কেজি এমপি সার শেষ চাষ মইয়ের বেলায় দিয়ে বেড সমান করে তৈরি করে নিতে হয়। ধনিয়া পাতা সংগ্রহের জন্য বীজ থেকে চারা গজানোর এক মাস পরপর প্রতি শতাংশ জমিতে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিতে হয়। সঙ্গে হালকা সেচ দিলে সারের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। ইউরিয়া সার প্রয়োগের ফলে পাতা রসালো, সবুজ ও তাড়াতাড়ি বাড়ে।
বীজ বপন
বয়স্ক গাছ থেকে অক্টোবর-নভেম্বরে বীজ সংগ্রহ করে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রসযুক্ত মাটিতে বেড করে বীজ বুনতে হয়। মনে রাখতে হবে, বীজ সংগ্রহের এক মাসের মধ্যে বীজ থেকে চারা গজানোর ক্ষমতা থাকে বেশি। এরপর যতই দিন যেতে থাকে ততই চারা গজানোর ক্ষমতা কমতে থাকে। বনঢুলা বা বিলাতি ধনিয়া অথবা বাংলার ধনিয়ার বীজ বুনতে হয় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার দূরে সারি করে। সারি ছাড়াও ছিটিয়ে বীজ বোনা যায়। এতে বীজ বেশি লাগে। প্রতি শতাংশ জমিতে ছিটিয়ে বীজ বুনলে বীজ লাগে ১৬০ গ্রাম আর সারি করে বুনলে লাগে ১৫০ গ্রাম।
পরিচর্যা
সূর্য থেকে যে পরিমাণ আলো মাটিতে পড়ে তার ১০ শতাংশ আলো হলেই বনঢুলার ফলন হয়। সে কারণে বেডে ছায়া দেয়া দরকার। পলিথিনের সাহায্যে ছায়া দেয়া যেতে পারে। গোড়া পচা ও ড্যাম্পিং অফ রোগ দুটি বনঢুলায় হতে পারে। এ রোগে বনঢুলার উপযোগিতা নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি লিটার পানির সঙ্গে তিন গ্রাম নোইন মিশিয়ে পাতা ও গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করে রোগ দুটি দমন করা যায়। মনে রাখতে হবে, স্প্রে করার কমপক্ষে ১৫ দিন পর ধনিয়া পাতা খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করা যেতে পারে, এর আগে নয়। কম সময়ে পাতা সংগ্রহ করে খেতে তা মানব শরীরে বিষক্রিয়ার কুফল সৃষ্টি করে। ধনিয়া পাতার গন্ধ কড়া বলে পোকামাকড় বেশি একটা দেখা যায় না।
পাতা সংগ্রহ
বনঢুলার পাতা রসালো, পরিপুষ্ট ও আকারে আশানুরূপ হলে বেড থেকে চারা গজানোর একমাস পর প্রতি ১৫ দিন পরপর পাতা সংগ্রহ করা যায়। প্রতি শতাংশ জমি থেকে ১৫ থেকে ২০ কেজি পাতা সংগ্রহ করা যায়। পাতার ওজন নির্ভর করে জমির আর্দ্রতার ওপর। এজন্য মাঝে মাঝে সেচ দেয়া প্রয়োজন। একবার বেডে বীজ বোনার পর ১০ থেকে ১২ বার পাতা সংগ্রহ করা যায়। এর পরের বারে প্রথমবারের মতো বেশি বেশি পাতা পাওয়া যায় না। বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে হলে প্রতি বছর বীজ বোনাই ভালো।
No comments:
Post a Comment