Friday, 19 June 2015

ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেয়া কে এই মুস্তাফিজ ?

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট, – ১২৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো ধুঁকছিল সফরকারী ভারত। এরপর রায়না ও জাদেজা মিলে অসাধারণ এক জুটি গড়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতে নেয়ার জোর চেষ্টা চালান। তবে মুস্তাফিজুর রহমানের জোড়া আঘাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। ৩৭তম ওভারে পরপর দুই বলে রায়না ও অশ্বিনকে আউট করে বাংলাদেশকে জয়ের পথেই রাখেন এই অভিষিক্ত পেসার। মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৮৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের প্রহর গুনছে ধোনির ভারত। বাংলাদেশ শিবির অপেক্ষা করছে জয়ের। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেই উত্তেজনা-রোমাঞ্চ বেশ জেঁকে ধরেছে টাইগার সমর্থকদের। ভারতের বিরুদ্ধে জয়ের নেশায় বুদ গোটা বাংলাদেশ। জয়ের জন্য চ্যালেঞ্জিং স্কোরও গড়েছে বাংলাদেশ।
দক্ষিন বঙ্গের সুন্দরবনের কোলঘেঁষে প্রকৃতির নৈস্বর্গীক জেলা সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থানার তেতুলিয়া গ্রামের ছেলে মুস্তাফিজুর রহমান। ১৯৯৫ সালে জন্ম নেয়া ১৯ বছর বয়সি এই মুস্তাফিজুর আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের পুরদস্তুর এক বোলার।
অনুর্ধ-১৯ দলের অসামান্য প্রতিভাধারী এই পেসার ইতিমধ্যে দেশ ছাড়িয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিমণ্ডলে। সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজের একমাত্র টি-২০ খেলার মধ্যদিয়ে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পা রেখেছেন সাতক্ষীরার এই তরুণ টাইগার। নির্বাচকদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন বাংলাদেশ-ভারত সিরিজেও।
ঘরের মাঠে এই সিরিজে ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে সাফল্যের জন্য অনেকটা বোলারদের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করবে। আর এরই প্রেক্ষিতে মাশরাফি, রুবেল ও তাসকিনের সাথে সঙ্গ দেওয়ার জন্য এই তরুণ বোলারই হয়ত হয়ে উঠতে পারেন বাংলাদেশ তথা মাশরাফির মোক্ষম হাতিয়ার।
এর আগে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে প্রথমবারের মত
খেলতে নেমে দুই উইকেট তুলে নিয়ে চমক দেখিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। যার একটি শহিদ আফ্রিদির। গত প্রায় ১৯টি বছর যে ব্যাটসম্যানের নাম শুনলে বোলারদের হৃদয়ে কাঁপুনি ধরে যেতো, সেই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান শহিদ আফ্রিদির উইকেট নিয়ে অভিষেক, সত্যি সত্যি বিস্ময়কর। বাংলাদেশের নতুন বাঁ-হাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুন পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে সুযোগ পেয়ে যান পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি২০ ম্যাচটিতে। ম্যাচের বোলিং ওপেনই করলেন মোস্তাফিজু। কিন্তু প্রথম বলেই ওয়াইড দিয়ে ক্যারিয়ার এবং ইনিংস শুরু করলেন বাঁ হাতি এ পেসার। প্রথম দুই ওভারে রান দিলেন মাত্র ৫টি। ১১তম ওভারে তাকে আবারও নিয়ে আসা হয় বোলিংয়ে। এবার প্রথম তিন বলেই দিলেন ১১ রান। কিন্তু চতুর্থ বলেই তুলে নিলেন আফ্রিদির উইকেট। তার আউটসুইঙ্গার আফ্রিদিও ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়ে মুশফিকের হাতে। বিস্ময়ের এই অভিষেকটাই হলো বাংলাদেশের নতুম বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের। এরপর ১৮তম ওভার করার জন্য আবারো মোস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি। এবার প্রথম বলেই ২ রান এবং দ্বিতীয় বলে ১ রান দেন তিনি। তৃতীয় এবং চতুর্থ বলে হাফিজ ব্যাটেই বল লাগাতে পারলেন না। পঞ্চম বলে গিয়ে হলেন পুরোপুরি পরাস্ত। এলবিডিব্লউর জোরালো আবেদন। আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে জানিয়ে দিলেন আবেদন সঠিক। হাফিজকে ফিরিয়ে দিয়ে অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখলেন মোস্তাফিজ। ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে তিনি তুলে নেন এ দু’টি মূল্যবান উইকেট। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুন পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে সুযোগ পেয়ে গেলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি২০ ম্যাচটিতে। গতকাল শুক্রবার পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে ঠাঁই পান ১৯ বছর বয়সী খুলনার এই ক্রিকেটার। মাশরাফি-তাসকিনদের সঙ্গী বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে জাতীয় দলের ক্যাপ পরিয়ে দেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সাকিব আল হাসান ক্যাপ পড়ান সৌম্যকে। মুস্তাফিজ ৪৪তম ও সৌম্য ৪৫তম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার। গত বছরের এপ্রিলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় মোস্তাফিজের। সাতটি ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ২৩ উইকেট। আর পাঁচটি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ১২টি উইকেট দখল করেন।
মোস্তাফিজুর রহমান সম্পর্কে প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ জানিয়েছিলেন, ‘মোস্তাফিজুরকে দলে নেয়াটা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর মনে হতে পারে। অনূর্ধ-১৯ দল ও ‘এ’ দলের হয়ে সে দারুণ বোলিং করে আমাদের নজড় কেড়েছে। মোস্তাফিজ একজন মেধাবী বোলার।
তার ডেলিভারীতে যথেষ্ট বৈচিত্র আছে, যা শর্ট ভার্সনে কার্যকরী হতে পারে।’ গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়ানডে দলে অভিষেক হওয়া সৌম্য সরকারেরও এ দিন টি-২০ অভিষেক হয়েছে। ওয়ানডে ওপেনার হিসেবে এরই মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করেছেন সৌম্য সরকার। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে ১২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তবে প্রথম টি-২০তে কোন বল না খেলেই দুর্ভাগ্যজনক রানআউট হয়ে শূন্য রানে আউট হয়েছেন এ অভিষিক্ত ওপেনিং ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশ-ভারত সিরিজে সুযোগ পাওয়ার পর  মুস্তাফিজুর রহমানের দারা  ভবিষ্যতে বিশ্বকাঁপানো টাইগারের প্রতিমূর্তি দেখতেই পারি আমরা কোটি বাঙ্গালীরা। আর এই মুহুর্মুহু জ্বলে ওঠা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।

No comments:

Post a Comment