Tuesday, 16 June 2015

ডোমেইন অথবা হোস্টিং কেনার আগে যে সব বিষয় ভেবে দেখা উচিত ।

১. ডোমেইন নেম কেমন হবে-
মানুষ ডোমেইন মানেই ডট কমকে মনে করে থাকে। তাই সব সময় ডট কমকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
সহজে মনে রাখা এমন হতে হবে।
যেন সহজে বানান করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
যেন শ্রুতিমধুর হয়, উদ্ভদ কোনো ডোমেইন পছন্দ করে পাঠকে ভড়কে দেবার প্রয়োজন নেই।
ডোমেইন যথা সাধ্য ছোট রাখার চেষ্টা করতে হবে।
যেন অন্য কোনো প্রতিষ্টিত ওয়েবসাইটের নামের সাথে গুলিয়ে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
২. ডোমেইন রেজিস্ট্রার পছন্দ করবেন যেভাবে-
যেহেতু বাংলাদেশে পেপাল ও ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা নাই, সেহেতু বাংলাদেশি ডোমেইন রেজিস্ট্রার থেকেই কিনতে হবে।ডোমেইন কেনার আগে কয়েকটা রেজিস্ট্রারের তালিকা তৈরি করুন। তারপর তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
**** সবাইকে জিজ্ঞাসা করুন ডোমেইনের ফুল কন্ট্রোল প্রদান করে কি না। ফুল কন্ট্রোল ছাড়া ডোমেইন কিনবেন না।
ডোমেইনের দামের ব্যাপারে চিন্তা করুন। অনেকেই ২০০-৪০০ টাকায় ডোমেইন অফার করে থাকে। এদের পরিহার করুন। কারন ICANN ডোমেইন নেম নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের ফি ১৮ সেন্ট আর .com এবং .net verisign এর মাধ্যমে রেজি করতে হয়। তাদের প্রাইস ৫০০-৬০০ টাকার উপরে। তাই বাংলাদেশি রিসেলাররা কিভাবে এই টাকায় দিবে চিন্তা করুন।
*** কমদামে ডোমেইন কিনে পরে প্রতারিত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। যেমন- রিনিউ করার সময় আপনার কাছ থেকে বেশি টাকা দাবী করা হতে পারে। অথবা সাইট জনপ্রিয় হলে ডোমেইনটি হাইজেক করা হতে পারে।
হোস্টিং কেনার আগে যা ভাববেন-
ডোমেইন পছন্দ করা এবং কেনা শেষে ডোমেইনটা হোস্ট করতে হবে। হোস্টিং ছাড়া ডোমেইন দিয়ে কোন কাজ হবে না। তাই হোস্টিং প্রোভাইডার নির্বাচন করার আগে কি কি বিষয় ভেবে দেখতে হবে তা জেনে নেই।
১. প্রত্যেকেরই একটা আনুমানিক বাজেট থাকে যার মধ্যে সে হোস্টিং কিনবে। একই সাথে ভাল মানের এবং কম টাকার মধ্যে কিনতে হলে অবশ্যই আপনাকে বাজার ঘুরে দেখতে হবে। আপনার বাজেট নির্ধারণ অবশ্যই বাস্তব সম্মত হতে হবে।একটা কথা মনে রাখতে হবে যেমন টাকা পে করবেন তেমন সার্ভিস পাবেন। আপনি যেমন ডিমের দামে মুরগী পাবেন না তেমনি হোস্টিং এর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। একটা ডেডিকেটেড সার্ভারের প্রাইস ১৫০-৫০০ ডলার প্রতি মাসে এখন আপনি যদি ৫০ জিবি স্পেস ২ ডলার মাসে চান তাহলে আপনাকে ডাউনটাইম, সাইট স্লো লোডিং এসব বিষয় সহ্য করতে হবে। তাই কেনার আগে এ বিষয়টি ভেবে দেখুন। সস্তার তিন অবস্থা এই কথাটি মাথায় রাখুন।
২. আপনাকে ডিস্ক স্পেস এর কথা চিন্তা করতে হবে। আপনার ওয়েব সাইটের জন্য কতটুকু স্পেস লাগবে তা হিসাব করে নিন। আপনি যদি ব্যক্তিগত ওয়েব সাইট করতে চান যাতে শুধু কয়েকটা পেজ থাকবে তাহলে ৫০ এমবি স্পেসই যথেষ্ট। আর যদি চিন্তা ব্যক্তিগত ব্লগ টাইপের ওয়েব সাইট হবে তাহলে ২০০-৫০০ এমবি স্পেসই যথেষ্ট। আর আপনি যদি চিন্তা করেন ছবি, গান, ভিডিও রাখবেনতবে আপনাকে বড় ওয়েব স্পেসের দিকে নজর দিতে হবে।
আনলিমিটেড স্পেসের ফাঁদে পা দিবেন না। এটা একটা মার্কেটিং ট্রিকস। কোন কোম্পানিরই আনলিমিটেড স্পেস দেয়া সম্ভব না। একবার চিন্তা করুন তো আপনি মার্কেটে আনলিমিটেড হার্ডডিস্ক দেখেছেন কি না। সার্ভারও আমাদের পিসির মতোই।
৩. প্রতিবার পাঠক / দর্শক যতগুলো পেজ আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করে, ততগুলো পেজ, ছবি, গান, ভিডিও অর্থাৎ ওইসব পেজে যা কিছু আছে সবগুলোই পাঠকের কম্পিউটারে ডাউনলোড হয়। প্রাথমিক অবস্থায় একটা সাইটের ১ জিবি ব্যান্ডউইথ ও যথেষ্ট। পারসোনাল সাইটের জন্য এর চেয়ে বেশি লাগার কথা না। আর আপনার সাইটে যদি প্রচুর ইমেজ, ভিডিও ইত্যাদি থাকে তাহলে প্রচুর ব্যান্ডউইথ লাগতে পারে। ১০-১০০ জিবি অথবা তারচেয়ে ও বেশি।
৪. একটি ওয়েবসাইটের জন্য আপটাইম বিষয়টি খুবই জরুরি। হোস্টের সার্ভার যতক্ষন সচল থাকবে, আপনার ওয়েবসাইটও ততক্ষন সক্রিয় থাকবে। এটা কেবলমাত্র পাঠকের জন্যই গুরুত্বর্পূণ নয়, বরং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনেও অনেক গুরুত্ব বহন করে। পাঠক একবার আপনার ওয়েবসাইটে আসে দেখলো আপনার ওয়েবসাইট কাজ করছে না, তখন তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে এবং সে ভবিষ্যতে নাও আসতে পারে। ঠিক তেমনি সার্চ ইঞ্জিনের বট ইনডেক্সের সময় ওয়েবসাইট ডাউন থাকলে, সে ফিরে যাবে এবং আপনি আপনার ওয়েবসাইট ইনডেক্স হওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন।এখন প্রতিটি হোস্টিং কোম্পানিই ৯৯.৯% টাইম সক্রিয় থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। আর কোম্পানি যদি কোন মাসে আপটাইম গ্যারান্টি রক্ষা না করতে পারে তাহলে সে জন্য ক্রেডিট প্রদান করে কি না চেক করে নিতে হবে। কোম্পানির ওয়েব সাইটে টার্মস অব সার্ভিসেস লিংকে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত লেখা থাকে।
৫. মানিব্যাক গ্যারান্টি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। অনেক কোম্পানিই ৩০ দিনের মানিব্যাক গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন কোম্পানি মানিব্যাক গ্যারান্টি দিচ্ছে কিনা।
৬. প্রতিষ্টানের সোশ্যাল রিভিউ চেক করে নিন। দেখুন অন্যরা তার প্রতিষ্টানের সার্ভিসে খুশি কি না। খারাপ রিভিউ পেলে সেই কোম্পানী এরিয়ে চলুন।
৭. সাপোর্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার সার্ভার যদি কখনো ডাউন হয় আর যদি তা জানাতে এবং উত্তর পেতে কয়েক দিন লেগে যায় তাহলে লক্ষ ভিজিটর হারাতে পারেন। আর যদি আপনি রিসেলার ক্লাইন্ট হোন তবে তো মহা বিপদে পড়বেন। আপনার ক্লাইন্টকে কোন উত্তর দেয়ার মতো কিছু থাকবে না। তাই কোম্পানির সাপোর্ট কত দ্রুত তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
৮. হোস্টিং প্লানগুলোর মধ্যে কোন লিমিটেশন থাকলে সেটা অনেক সময় ভালভাবে উল্লেখ করা থাকে না। তাই প্লানগুলোর তুলনা করে আপনার চাহিদার সাথে বেপারগুলো মিলে কিনা তা দেখে নিন। আপনি যদি এএসপি ডট নেটে সাইট বানাতে চান তাহলে আপনার উন্ডডোজ হোস্টিং লাগবে। লিনাক্স হোস্টিং এ চলবে না। আপনার যে যে ফিচার প্রয়োজন তা তারা দিতে পারছে কি না দেখে নিন।
৯. আপনি আপনার হোস্টিং এ কি কি হোস্ট করতে পারবেন এবং কতটুকু স্পেস, ব্যান্ডউইথ, সিপিউ ব্যবহার করতে পারবেন তা টার্মস অব সার্ভিসেস পেজে দেয়া থাকে। তাই কোম্পানির টার্মস অব সার্ভিসেস পড়ে নিতে হবে।
১০. আপনার ওয়েব সাইট ম্যানেজ করার জন্য কন্ট্রোল প্যানেল প্রয়োজন। কন্ট্রোল প্যানেলের সাহায্যে আপনি আপনার ওয়েব সাইট সহজেই ম্যানেজ করতে পারেন। ওয়েব হোস্টিং এ সব চেয়ে সহজ এবং অধিক ফিচার সমৃদ্ধ কন্ট্রোল প্যানেল হচ্ছে সিপ্যানেল। তাই সবসময় সিপ্যানেল হোস্টিং নেয়ার কথা চিন্তা করুন।
১১. সার্ভার ওভার লোড কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন। আপনি হোস্টিং কোম্পানিকে সার্ভারের টোটাল কোর এবং প্রসেসর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন। যদি সার্ভার কোর ৮টা হয় এবং তাদের সার্ভার লোড ৮ এর উপরে হয় তাহলে সার্ভার ওভারলোড। এবং ওভারলোড সার্ভারে সাইট হোস্ট করলে সাইট লোড হতে বেশি সময় নিবে।
এসব বিষয় খেয়াল রেখে ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনলে আশাকরি ভাল মানের হোস্টিং কিনতে পারবেন।
ধন্যবাদ।

No comments:

Post a Comment