বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম ওয়ানডে শুরু হবে বেলা তিনটায়।
মুখে প্রতিশোধের কথা বলেননি বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার। বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলার স্বপ্নভঙ্গের বেদনা এখনও ভোলেননি তারা। সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার প্রথম সুযোগটি হারাতে চাইবেন না স্বাগতিক দলের খেলোয়াড়রা।
টেস্টে পেরে না উঠলেও ওয়ানডেতে ভারতের সঙ্গে সমান তালেই লড়ে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপের মতো টুর্নামেন্টে শক্তিশালী এই প্রতিবেশীর বিপক্ষে জয় রয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজাদের।
ভারতের বিপক্ষে আরেকটি জয় সিরিজে এগিয়ে নেওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করবে। ইংল্যান্ডে ২০১৭ সালে হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টে খেলতে হলে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র্যাঙ্কিংয়ে ৮ নম্বর স্থান ধরে রাখতে হবে বাংলাদেশকে। ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের মধ্যে একটিতে জিততে পারলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে সাতে চলে আসবে বাংলাদেশ, যা সেই টুর্নামেন্টের পথে এগিয়ে নেবে মাশরাফিদের। প্রথম ম্যাচ জিতেই নিজেদের সেই নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে চায় তারা।
দেশের মাটিতে টানা আটটি ওয়ানডেতে জেতা বাংলাদেশের জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব হবে না। এই সময়ে জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ও পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারায় মাশরাফিরা।
টেস্টের মতো ধারহীন নয় বাংলাদেশের ওয়ানডে বোলিং। পেস ত্রয়ী মাশরাফি, রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদের যে কোনো দলের বিপক্ষেই জ্বলে ওঠার সামর্থ্য আছে। প্রথম ওয়ানডেতে তাই বাইরেই থাকতে হতে পারে তরুণ বাঁহাতি মুস্তাফিজুর রহমানকে।
ভারতের বিপক্ষে বরাবরই জ্বলে উঠেন মাশরাফি। তাসকিন-রুবেলের সামর্থ্য আছে গতি দিয়ে অতিথিদের এলোমেলো করে দেওয়ার।
চোট থেকে সেরে উঠেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তার। মাশরাফি নিজেই জানিয়েছেন, প্রথম ওয়ানডে খেলবেন তিনি। নিজেদের পেস আক্রমণ নিয়ে সন্তুষ্ট দেশসেরা এই পেসার।
“অধিনায়ক হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, এই মুহূর্তে আমার কাছে বেশ ভালো একটা পেস অ্যাটাক আছে। যারা যেকোনো দলের বিপক্ষে ভালো করতে পারবে।”
বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণও সমীহ করার মতো। দুই বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান ও আরাফাত সানির উপস্থিতিতে স্বাগতিকদের বোলিং আক্রমণ যথেষ্ট ধারাল। পেসারদের কাজটা সহজ করার সামর্থ্য তাদের ঠিকই আছে।
প্রয়োজনে নাসির হোসেন, সাব্বির রহমানদের দিয়েও কিছু ওভার করাতে পারবেন মাশরাফি। দলের ফিল্ডিংয়ের মান নিয়ে ভীষণ খুশি তিনি। ব্যাটিং ও বোলিং নিয়েও কোনো দুর্ভাবনা নেই তার। তাই জয়ের স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
“আমাদের ব্যাটিং শক্তিশালী। আমাদের বোলিংও খারাপ নয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের ভালো একটি সিরিজ গেছে।”
ওয়ানডেতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ সফল বাংলাদেশ। র্যাংঙ্কিংয়েও পড়েছে তার ছাপ। অস্ট্রেলিয়া, ভারতের মতো দলগুলোর চেয়ে এখন নিজেদের খুব একটা পিছিয়ে রাখছেন না বাংলাদেশের অধিনায়ক।
বাংলাদেশের ওয়ানডে দলকে সমীহ করার কথা বলেছেন ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। মাশরাফি মনে করেন, নিজেদের পারফরম্যান্সেই প্রতিপক্ষের এই শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন তারা।
“এখন বিশ্বে যতগুলো দল ওয়ানডে ভালো খেলছে বাংলাদেশও তার একটি। আমরা ভালো খেলছি বলেই এখন সবাই এই কথা বলছে। আমাদের এটা মাঠে দেখাতে হবে। এটা কোনো চাপ নয়, ভালো খেলতে থাকলে নিজের ভেতর আত্মবিশ্বাস থাকেই।”
পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ সিরিজে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং বীরত্বে সাকিব-সাব্বির-নাসিররা খুব একটা ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকারের কাছ থেকে একই রকম ইনিংস দেখতে চান মাশরাফি।
প্রথম দুই ওয়ানডেতে শতক করেন তামিম। তৃতীয় ওয়ানডেতে শতক করেন তরুণ সৌম্য। নাসির পুরো সিরিজে কেবল একটি বল খেলার সুযোগ পান।
তিন নম্বরে মাহমুদউল্লাহর অভাব অনুভব করবে বাংলাদেশ। তার জায়গায় লিটন দাসের অভিষেক প্রায় নিশ্চিত।
প্রথম ওয়ানডেতে লড়াই আশা করছেন মাশরাফি, “ভারতের সাথে খেলা সবসময় চ্যালেঞ্জিং। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভারত ফেভারিট। বড় দলের সঙ্গে খেলা হলে তারাই স্বাভাবিকভাবে ফেভারিট হয়। তবে আমরা কিন্তু এটা চিন্তা করি না যে, আমরা তাদেরকে হারাতে পারব না। আমরা অবশ্যই জেতার জন্যে খেলব।”
জয় ছাড়া আর কিছু ভাবছে না ভারত। বাংলাদেশের প্রতি সমীহের কমতি নেই অতিথিদের। কিন্তু নিজেদের সামর্থ্যের ওপরও পূর্ণ আস্থা রয়েছে তাদের।
একটি পরিবর্তন ছাড়া বিশ্বকাপ কোয়ার্টার-ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা ভারত দলটিকেই দেখা যেতে পারে প্রথম ওয়ানডেতে। চোটের কারণে দলে না থাকা মোহাম্মদ সামির জায়গায় ফিরতে পারেন ভুবনেশ্বর কুমার।
প্রথম ওয়ানডে খেলার আগে বৃষ্টির কথাও ভাবনায় রাখতে হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতকে। ফতুল্লায় একমাত্র টেস্টে যে ভারতের বদলে জয় হয়েছিল বৃষ্টিরই।
No comments:
Post a Comment